
আপনি গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসের শেষের দিকে চলে এসেছেন।এখন আপনার বমি ভাব ও মাথা ব্যথা কমে আসবে।বাচ্চার ওজন ৮ গ্রামের মত হয় ও ৩-৫ সে. মি. এর মত লম্বা হয়।
১২ সপ্তাহ:
অভিনন্দন!!! এটা আপনার প্রথম তিন মাসের শেষ সপ্তাহ ।এই সপ্তাহে বাচ্চার নাক ও ঠোঁটের গঠন সম্পূর্ণ হয়।এসময় বাচ্চা তার কিডনি থেকে প্রসাব উৎপাদন করতে পারবে।এই সময় কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।প্রচুর পানি পান করুন ও আঁশযুক্ত খাবার খান।বাচ্চা ৫-৬ সে. মি. এর মত লম্বা হয়।
দ্বিতীয় তিন মাস১৩ সপ্তাহ:
অভিনন্দন!!! আপনার দ্বিতীয় তিন মাসের প্রথম সপ্তাহ।খাবারের রুচি বেড়ে যেতে পারে বা বমি ভাবের কারনে অরুচি দেখা দিতে পারে।টক,মসলাদার বা মিস্টি খাবারের প্রতি আসক্তি দেখা দিতে পারে।বমি ভাব কমে যাবে ও আগের চেয়ে কিছুটা সুস্থ বোধ করবেন।
১৪ সপ্তাহ:
এই সপ্তাহে বাচ্চার নড়াচড়া অনুভব করবেন। এই সময় বাচ্চা ৯-১০ সে. মি. লম্বা হয় ও ওজন ৫০ গ্রামের মত হয়।এই সময় বাচ্চা শ্বাস প্রশ্বাস নেয় ও অ্যামিওনিটিক ফ্লুইড গ্রহন করে।এটি বাচ্চার শ্বসনতন্ত্র ও খাদ্যতন্ত্র গঠনে সাহায্য করে। ঘুমের সমস্যা দেখা দিতে পারে ও পায়ে ব্যথা হতে পারে। হালকা ম্যাসাজ করলে উপকার পাওয়া যাবে।
১৫ সপ্তাহ:
এই সপ্তাহে বাচ্চা ৯-১০ সে. মি. লম্বা হয় ও ওজন ১০০ গ্রামের মত হয়।বাচ্চার ত্বক খুবই পাতলা হয় এবং চুল উঠতে শুরু করে।এই সময় বমি বমি ভাব কমে আসবে ও আগের চেয়ে সুস্থ অনুবভ করবেন।হাত ও পায়ে পানি আসতে পারে। এক্ষেত্রে হালকা ব্যায়াম, সাতাঁর বা হাটাহাটি করতে পারেন এবং অবশ্যই নিয়মিত ৮ গ্লাসের মত পানি পান করবেন।
১৬ সপ্তাহ:
এই সপ্তাহে বাচ্চা ১১-১২ সে. মি. লম্বা হয়। এই সময় বাচ্চার কান ও চোখ সঠিক অবস্থানে আসে । হাত ও পায়ের নখ তৈরী হয়।কোমরে ব্যাথা অনুভব করতে পারেন।এই ক্ষেত্রে বাম দিকে কাত হয়ে ঘুমাবেন। এক জায়গায় অনেকক্ষন দাড়িয়ে থাকবেন না এবং বসার পরে পা ছড়িয়ে দিন ।দাঁতের মাড়ি ফুলে যেতে পারে বা রক্ত পড়তে পারে। দাঁতের সঠিক যত্ন নিন ও ডেন্টিস্টের পরামর্শ নিন।
১৭ সপ্তাহ:
এই সপ্তাহে বাচ্চা ১৩.৫ সে. মি. লম্বা হয় ও ওজন ১৫০ গ্রামের মত হয়।পেটের নিচে অংশে ব্যথা হতে পারে কারন বাচ্চার বৃদ্ধির সাথে সাথে পেশীর উপর চাপ পড়ে।কোমরে ও হাত পায়ে ব্যাথার অনুভূতি থাকতে পারে।আপনার ক্ষুধা বেড়ে যেতে পারে। বুকজ্বালা পোড়া হলে একাসাথে বেশী খাবার খাবেন না ও খাবার পরপর শুয়ে পড়বেন না।
১৮ সপ্তাহ:
এই সপ্তাহে বাচ্চা ১৫ সে. মি. লম্বা হয় ও ওজন ২৫০ গ্রামের মত হয়।এই সময় বাচ্চা শব্দ শুনতে পায় ও নড়াচড়া করার সুযোগ পায়।মাথা ঘুরাতে পারে, সাদা রংয়ের vaginal discharge বের হতে পারে।যদি vaginal discharge এর রং পরিবর্তন হয় এবং চুলকনি ও দুর্গন্ধ থাকে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
১৯ সপ্তাহ:
এই সপ্তাহে বাচ্চার ওজন ৩০০ গ্রামের মত হয় ও ১৬ সে. মি. লম্বা হয় । এই সময় বাচ্চার ত্বকে সাদা ক্রিমের মত পদার্থের প্রলেপ দেখা যায়। এটা বাচ্চার ত্বককে অ্যামিওনিটিক ফ্লুইডের এফেক্ট থেকে রক্ষা করে।যথাসম্ভব বিশ্রাম নেয়ার চেষ্টা করুন।
২০ সপ্তাহ:
অভিনন্দন !! আপনি গর্ভকলীন সময়ে অর্ধেক সময় পার করে ফেলেছেন।এই সপ্তাহে বাচ্চা ১৮ সে. মি. লম্বা হয় ও ওজন ৩৫০ গ্রামের মত হয়।ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে ও দু:স্বপ্ন দেখতে পারেন। নিজেকে মানসিকভাবে শান্ত রাখার চেষ্টা করুন।যেহেতু বাচ্চা খুব দ্রুত বাড়তে থাকে তাই এটি ফুসফুসে চাপ সৃষ্টি। এই জন্য শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে।
২১ সপ্তাহ:
এই সপ্তাহে বাচ্চার ওজন ৩৫০-৪২৫ গ্রামের মত হয় ও ১৯ সে. মি. লম্বা হয়। বাচ্চার চোখের পাপড়ি ও ভ্রু যুগল তৈরী হতে শুরু করে।বাচ্চার নড়াচড়া আগের চেয়ে বেশী অনুভব করবেন।এই সময়ে বাচ্চা স্বাদগ্রন্থি তৈরী হতে শুরু করে তাই মায়ের বিভিন্ন স্বাদের খাবার খাওয়া্ উচিত।
২২ সপ্তাহ:
আপনার ২য় তিন মাস প্রায় শেষ হওয়ার পথে। এই সময় আপনি নতুন বাচ্চার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরূ করতে পারেন। এই সপ্তাহে বাচ্চা ২০ সে. মি. লম্বা হয় ও ওজন ৪২৫-৫০০ গ্রামের মত হয়।আপনার ওজন এখন থেকে দ্রুত বাড়তে থাকবে। এই সময় বাচ্চার ঠোঁটের গঠন সর্ম্পূণ হয়।ডায়াবেটিস টেস্ট করার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন (২৪-২৮ সপ্তাহের মধ্যে করাবেন)
২৩ সপ্তাহ:
এই সপ্তাহে বাচ্চার ওজন ৫০০-৬০০ গ্রামের মত হয় ও ২১ সে. মি. লম্বা হয়।বাচ্চার ফুসফুসের বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে।বাচ্চা আপনার কথা ও হৃদস্পন্দন শুনতে পায়।পায়ে পানি আসতে পারে ও কোমরে ব্যথা থাকে।দাঁত থেকে রক্ত পড়তে পারে তাই দাঁতের যত্ন নিন।
২৪ সপ্তাহ:
এই সপ্তাহে বাচ্চার ওজন ৬০০-৭০০ গ্রামের মত হয় ও ২২ সে. মি. লম্বা হয়। বাচ্চার চোখের গঠন সম্পূর্ণ হয়। এই সময় বুক জ্বালাপোড়া,পেশীতে ব্যথা, মাথা ঘুরানো ও অবসাদ অনুবভ করতে পারেন।চোখে শুস্ক ভাব, কচকচে ভাব ও আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা আসতে পারে।শরীরে স্ট্রেচ মার্ক দেখা যায় বিশেষ করে পেটে এবং হালকা চুলকানিও হতে পারে।এই সময় লোশন বা ক্রীম মাখতে পারেন এতে করে চুলকানি কমবে।
২৫ সপ্তাহ:
এই সপ্তাহে বাচ্চার ওজন ৭০০-৮০০ গ্রামের মত হয় ও ২৩ সে. মি. লম্বা হয়।এই সময় বাচ্চার বিভিন্ন ইন্দ্রিয় যেমন চোখ, নাক, কান ও জিহ্বা পূর্ণতা পেতে শুরু করে।বারবার প্রসাবের বেগ হওয়া বা প্রসাবে জ্বালাপোড়া মূত্রনালীর সংক্রমণ বা ইউরিনারি ট্রাক্টে ইনফেকশনের লক্ষন। এই লক্ষনগুলোকে পর্যবেক্ষন করুন ও ডাক্তরের পরামর্শ নিন।কোন হাসপাতালে ডেলিভারী করাতে চান তা এখন থেকেই ঠিক করে নিতে পারেন।
২৬ সপ্তাহ:
এই সপ্তাহে বাচ্চার ওজন ৮৫০-১০০০ গ্রামের মত হয় ও ২৪ সে. মি. লম্বা হয়।এই সপ্তাহে বাচ্চা প্রথমবারের চোখ খুলতে পারে। যদিও মায়ের গর্ভে দেখার তেমন কিছুই নেই কিন্তু কোন তীব্র আলো মায়ের গর্ভে পড়ে তাহলে তা সনাক্ত করতে পারে।মায়ের খাবারের প্রতি বেশী যত্নশীল হতে হবে।অল্প অল্প করে বার বার খাবেন এতে করে আপনার ব্লাড সুগার লেভেল ঠিক থাকবে এবং ক্লান্তি অনুভব করবেন না।আগামী সপ্তাহ থেকে আপনার তৃতীয় তিন মাস শুরু হবে।
তৃতীয় তিন মাস২৭ সপ্তাহ:
এই সপ্তাহে বাচ্চার ওজন ১০০০-১১০০ গ্রামের মত হয় ও ২৫ সে. মি. লম্বা হয়। এই সময় বাচ্চার অধিকাংশ অঙ্গ প্রত্যঙ্গের গঠন সম্পূর্ণ হয় ও শ্রবন শক্তির বিকাশ ঘটে।
২৮ সপ্তাহ:
বাচ্চার ওজন ১১০০-১২৫০ গ্রামের মত হয় ও ২৬ সে. মি. লম্বা হয়।আপনি প্রসবকালীন সময়ের কাছাকাছি চলে এসেছেন ।অনেকেরই প্রসবের নির্ধারিত সময়ের আগে ব্যাথা বা কিছু লক্ষন দেখা দিতে পারে ।একে প্রির্টাম লেবার বলে। এর লক্ষন হল কোমরে হালকা ব্যথা, পানি ভেঙ্গে যাওয়া, জরায়ু থেকে রক্ত বা পিচ্ছিল পদার্থ বের হওয়া ও ১০ মিনিট পরপর জরায়ুর সংকোচন ও প্রসারণ অনুভব করা। এই লক্ষনগুলো দেখা গেলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
২৯ সপ্তাহ:
এই সপ্তাহে বাচ্চার ওজন ১৩০০-১৪০০ গ্রামের মত হয় ও ২৭ সে. মি. লম্বা হয়।ফুসফুসের গঠন সম্পূর্ণ না হলেও বাচ্চা শ্বাস প্রশ্বাস নিতে শুরু করে। বাচ্চার চোখ আলো সনাক্ত করতে পারে ও হাড়ের গঠন সম্পূর্ণ হয়।গর্ভাবস্থায় হাটা সবচেয়ে ভাল ব্যায়াম।
৩০ সপ্তাহ:
বাচ্চা ২৪ সে.মি. লম্বা হয় ও ওজন ১৫০০-১৬০০ গ্রামের মত হয়।অধিকাংশ সময় বাচ্চা ঘুমিয়ে কাটায়। এখন থেকেই লক্ষ্য রাখতে পারেন যে কখন বাচ্চা ঘুমায় ও কখন খেলা করে।এই সময় স্তন থেকে শাল দুধের নিঃসরণ হতে পারে। অনেকেই একে প্রসবের লক্ষন মনে করতে পারেন । এটি অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় এতে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।জন্মের পরপরই বাচ্চাকে শাল দুধ খাওয়ানো উচিত কারন এতে থাকে প্রচুর প্রোটিন ও অ্যন্টিবডি।
৩১ সপ্তাহ:
এই সপ্তাহে বাচ্চার ওজন ১৭০০-১৮০০ গ্রামের মত হয় ও ২৯ সে. মি. লম্বা হয়।বাচ্চার ওজন দ্রুত বাড়তে থাকে এর ফলে মায়ের ওজনও বেড়ে যায়।এই কারণে হাত পায়ে ব্যথা থাকতে পারে।ব্যথা কমানোর জন্য হালকা ম্যাসাজ করতে পারেন।
৩২ সপ্তাহ:
বাচ্চা ৩০ সে.মি. লম্বা হয় ও ওজন ১৯০০-২০০০ গ্রামের মত হয়।বাচ্চার কিডনীর গঠন সম্পূর্ণ হয়।এই সময় বাচ্চার মাথা নিচের দিকে থাকবে যদি না তাকে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।হাত পায়ে অতিরিক্ত পানি আসা, চোখে ঝাপসা দেখা ও মাথা ব্যথা থাকলে জরুরি ভিত্তিতে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।এগুলো হল প্রিএকলাম্পাসিয়ার লক্ষন।
৩৩ সপ্তাহ:
এই সপ্তাহে বাচ্চার ওজন ২১০০-২২৫০ গ্রামের মত হয় ও ২৯ সে. মি. লম্বা হয়।এই সময় বাচ্চা আশেপাশের জিনিস দেখতে পায় ও অনুভূতিগুলো বুঝতে শেখে।এমনকি মায়ের হৃদস্পন্দন ও কথা শুনতে পায়।যেহেতু এই সময় বাচ্চা দ্রুত বাড়তে থাকে তাই একটু বাড়তি খাবার খান।
৩৪ সপ্তাহ:
এই সপ্তাহে বাচ্চার ওজন ২০৫০-২৫৫০ গ্রামের মত হয় ও ৩৩ সে. মি. লম্বা হয়।আপনি গর্ভবস্থার শেষ সময়টুকু পার করছেন তাই দীর্ঘ ভ্রমন এড়িয়ে চলুন।প্রসব ব্যথার লক্ষনগুলোর দিকে লক্ষ্য রাখুন যেমন: জরায়ুর সংকোচন ও প্রসারণ, কোমরের নিচের দিকে ব্যথা, পানি ভেঙ্গে যাওয়া ইত্যাদি।
৩৫ সপ্তাহ:
এই সপ্তাহে বাচ্চার ওজন ২৬০০-২৭০০ গ্রামের মত হয় ও ৩৪ সে. মি. লম্বা হয়। আপনার প্রচুর আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।কারণ বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগের মাসে এই অতি প্রয়োজনীয় মিনারেলটি মায়ের শরীর থেকে নিয়ে নেয়।এটি রক্তের কোষ গঠনে সাহায্য করে
৩৬ সপ্তাহ:
এই সপ্তাহে বাচ্চার ওজন ২৮৫০-২৯৫০ গ্রামের মত হয় ও ৩৫ সে. মি. লম্বা হয়।পরের কয়েক সপ্তাহ বাচ্চার শরীর দ্রুত বাড়তে থাকবে। এই সময়ে প্রচুর সাদা স্রাব যেতে পারে ।এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। যদি স্রাবের সাথে রক্ত দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে প্রসব ব্যথা শুরু হচ্ছে।
৩৭ সপ্তাহ:
এই সপ্তাহে বাচ্চার ওজন ৩০০০-৩১০০ গ্রামের মত হয় ও ৩৬ সে. মি. লম্বা হয়।এই সময় যদি স্রাবের সাথে রক্ত দেখা যায় তাহলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
৩৮ সপ্তাহ:
এই সপ্তাহে বাচ্চার ওজন ৩২০০-৩২৫০ গ্রামের মত হয় ও ৩৭ সে. মি. লম্বা হয়।এই সময় বাচ্চার গঠন সম্পূর্ণ হয়। ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে কিন্তু এই সময় প্রচুর পানি খেতে হবে।অধিকাংশ শিশু জন্মের নির্ধারিত সময়ের দুই-চার সপ্তাহের আগে জন্ম নেয়।
৩৯ সপ্তাহ:
এই সপ্তাহে বাচ্চার ওজন ৩২০০-৩২৫০ গ্রামের মত হয় ও ৩৭ সে. মি. লম্বা হয়।এই সময় দ্রুত ওজন বাড়তে থাকে এবং প্রসবের লক্ষণগুলোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
৪০ সপ্তাহ:
অভিনন্দন!! একটি দীর্ঘ ও সুন্দর যাত্রার এটাই শেষ সপ্তাহ । এই সপ্তাহের যেকোন দিন আপনার ছোট্ট সোনামনি আপনার কোল আলো করে এই পৃথিবীতে আসবে।
জন্মের সময় বাচ্চার ওজন:
প্রিটার্মবেবী: যেসকল শিশু ৩৭ সপ্তাহের আগে জন্ম নেয় তাদেরকে প্রিটার্ম বেবী বলে। এই সকল শিশুর জন্মের সময় ওজন ২.২৬ কেজি বা এর কম হয়ে থাকে।
টার্ম বেবী: যেসকল শিশু ৩৮-৪০ সপ্তাহের মধ্যে জন্ম নেয় তাদেরকে টার্ম বেবী বলে।এই সকল শিশুর জন্মের সময় ওজন ৩.৩৪ কেজি হয়ে থাকে।
পোস্টটার্ম বেবী: যেসকল শিশু ৪১ সপ্তাহের পরে জন্ম নেয় তাদেরকে পোস্টটার্ম বেবী বলে।এই সকল শিশুর জন্মের সময় ওজন ৪ কেজির বেশি হয়ে থাকে।
আপনি মা হতে যাচ্ছেন তাই এখন থেকেই স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া উচিত। এক্ষেত্রে অব্যশই খেয়াল রাখতে হবে যে আপনি ও আপনার শিশু খাবার থেকে প্রয়োজনীয় পুস্টি পাচ্ছেন কিনা।আপনার প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় অবশ্যই নিচের চার ধরনের পুস্টিকর খাবার থাকতে হবে।
গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীর আগের তুলনায় অনেক বেশী কাজ করে। তবে সাধারণত প্রথম ছয় মাসে বাড়তি ক্যালরির দরকার হয় না।সবচেয়ে ভাল উপায় হচ্ছে যখনই ক্ষুধা বোধ হবে তখনই খাবেন।প্রথম কয়েক সপ্তাহে বমি ভাব ও দুর্বলতার কারণে খাবারে অরুচি দেখা দিতে পারে এক্ষেত্রে অল্প অল্প করে বারবার খাওয়া উচিত।
গর্ভাবস্থায় কি খাওয়া উচিত নয়ডিম বা ডিমের কুসুম পুরোপুরি সিদ্ধ করে খেতে হবে। আধা সিদ্ধ বা কাচা ডিম খাওয়া উচিত নয়।যেকোন মাংস ভালভাবে রান্না করে খেতে হবে।কাচা মাংস বা আধা সিদ্ধ মাংস দিয়ে তৈরী খাবার খাওয়া উচিত নয়। খুব বেশী মুরগির বা গরুর কলিজা খাওয়া ঠিক না। দিনে এক বা দুই কাপের বেশী কফি বা চা পান করা ঠিক না। ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করুন।
গর্ভাবস্থায় ডায়েটগর্ভাবস্থায় ডায়েট করা উচিত না এতে করে আপনার শরীর পুস্টিহীনতায় ভুগতে পারে।গর্ভাবস্থায় ওজন বাড়া ভাল লক্ষন কিন্তু আপনার ওজন যদি খুব বেশী বেড়ে যায় তাহলে খাবারের তালিকা থেকে চিনি ও চর্বি যুক্ত খাবার বাদ দিন ও হালকা ব্যায়াম করুন। তবে তার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
গর্ভাবস্থায় ওজন কতটুকু বাড়বেধীরে ধীরে ওজন বাড়া সবচেয়ে ভাল।সাধারণত গর্ভাবস্থায় ওজন ১০-১২ কেজি বাড়তে পারে।
দিনে কত বার খাবেননিয়মিত খাবার খাবেন। তিন বেলা খাবারের পাশাপাশি ৩-৪ বার হালকা নাস্তা করতে পারেন। যদি খাবারে অরুচি বা বদহজম হয় তাহলে অল্প অল্প করে বারবার খাবেন।
গর্ভাবস্থায় ১০টি সুপার ফুডএই ১০টি খাবা্রে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি যা মা ও শিশুকে সুস্থ রাখবে।
ডিম:
ডিম শিশুর মস্তিকের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং জন্মগত ত্রুটি দূর
করে ।গর্ভাবস্থায় সিদ্ধ ডিম খাওয়া ভাল।আর কেউ যদি ওমলেট বা ডিম পোচ খেতে
চান তাহলে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে ডিম যেন কাঁচা না থাকে।
মিষ্টি আলু:
মিষ্টি আলুতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ফাইবার, ভিটামিন বি৬, পটাশিয়াম, ভিটামিন
সি এবং আয়রন ।এগুলো শিশুর বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় । এছাড়া এতে রয়েছে কপার
যা শরীরে আয়রন দ্রুত শোষন করতে সাহায্য করে।মিষ্টি আলু সিদ্ধ করে বা বেক
করে খেতে পারেন । এছাড়া ফ্রেন্স ফ্রাইয়ের মত করেও খেতে পারেন ।
বাদাম:
বাদামে রযেছে ওমেগা-৩, প্রোটিন, ফাইবার এবং বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও
মিনারেল।এছাড়াও রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম যা প্রিম্যচিউর ডেলিভারির ঝুঁকি কমায় ও
শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের গঠনে সাহায্য করে ।
শস্য ও ডাল:
শস্য ও ডাল থেকে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন ও আয়রন পাওয়া যায় । এছাড়া জিংক ও
ক্যালসিয়ামও পাওয়া য়ায় ।
চর্বি ছাড়া মাংশ:
মাংশ থেকে পাওয়া যায় প্রোটিন ও আয়রন ।যা শিশুর মস্তিকের বিকাশে
গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রাখে।
কমলার রস :
এক গ্লাস কমলার রস থেকে আপনি প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম, ভিটামিন সি পাবেন ।
যা শিশুর দাতঁ ও হাড়ের গঠনকে মজবুত করবে।
দই :
দই এ দুধের চেয়ে বেশী ক্যালসিয়াম থাকে । এছাড়া এতে ভিটামিন বি এবং জিংক
রয়েছে । একজন গর্ভবতী মাকে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমানে ক্যালসিয়াম গ্রহন করতে
হবে ।ক্যালসিয়ামের ঘাটতির ফলে জন্মের সময় শিশু কম ওজন নিয়ে জন্মাতে পারে
এবং মা পরবর্তীতে হাড়ের বিভিন্ন সমস্যায় ভুগতে পারে ।
ওটামিল:
ওটস এ প্রচুর পরিমানে ফাইবার, প্রোটিন এবং ভিটামিন বি৬ থাকে ।
সকাল বেলাটা একবাটি ওটামিল খাওয়া শুরু করতে পারে এতে করে সকালের বমি ভাবটা
একটু কমতে পারে । গর্ভাবস্থায় অনেকে কোস্ঠকাঠিন্যে ভুগে থাকেন । ওটস এর
প্রচুর ফাইবার আপনাকে এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিবে । ওটস বিভিন্ন সুপার শপ
এবং দোকানে কিনতে পাওয়া যায় ।
সবুজ শাকসবজি:
শাক সবজি নিয়ে বলার তেমন কিছুই নেই । এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ও
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা বাচ্চা ও মা দুই জনকেই সুস্থ রাখবে ।
মাছ:
বিভিন্ন ধরনের মাছ আপনার খাবারের মেন্যুতে রাখা উচিত । মাছের তেলে রয়েছে
ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড ও প্রোটিন ।
গর্ভাবস্থায় ক্লান্তি খুবই সাধারন ব্যাপার।গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে অনেক পরিবর্তন আসে তাই ক্লান্ত লাগে।গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে ক্লান্তি ভাব অনেক বেশী হয় কারন এই সময় মায়ের শরীর শিশুর জন্য প্রস্তুত হয়।যদি ক্লান্তিভাব দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন । কারন অনেক সময় দেখা যায় যে গর্ভবতী মায়েরা রক্তশূন্যতায় ভুগে থাকেন এই কারনে ক্লান্তিবোধ আসতে পারে।এছাড়া প্রচুর পরিমানে বিশ্রাম নিন এতে করে অনেকটা সুস্থ বোধ করবেন।প্রচুর স্বাস্থ্যকর খাবার আপনার ক্লান্তি দূর করতে পারে।খাবারে অরুচি থাকলে , অল্প অল্প করে বারবার খান। কিছু হালকা ব্যায়াম করতে পারেন যেমন হাটা ও সাঁতার ক্লান্তি দূর করবে এবং রাতের ঘুমও ভাল হবে।
ব্যথা আর ব্যথাগর্ভাবস্থায় ব্যথা নিত্যদিনের সংগী । তবে এতে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।গর্ভের শিশু আপনার শরীর, হাড় ও পেশীর উপর চাপ ফেলে। তাই হাত, পা ও পেটের চারপাশে ব্যথা থাকতে পারে।ব্যথা কমানোর কিছু উপায়
গর্ভাবস্থায় অনেক সময় দাঁত থেকে রক্ত পড়ে ও মাড়ি ফুলে যায়।দাঁতে সমস্যা শিশুর বিকাশকে বাধাগ্রস্থ করে এর ফলে প্রিম্যাচিউর বেবী জন্ম নিতে পারে।দিনে দুই বার টুথপেস্ট দিয়ে দাতঁ মাজুন। নরম ব্রাশ ব্যাবহার করুন। ডাক্তারের পরামর্শ নিন ও দাঁতের যত্ন নিন।
সাধারণত গর্ভকালীন সময়ের সাধারণ লক্ষণগুলো গর্ভবতী মায়ের কাছে নতুন মনে হতে পারে বিশেষ করে যারা প্রথমবার মা হতে যাচ্ছেন।কিছু লক্ষণ আছে যা কখনই অবহেলা করা উচিত নয়।এই লক্ষণগুলোর যেকোন একটি দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।