মাতৃভাষা ঐশ্বরিক উপহার. পবিত্র কুরআন
থেকে জানা যায় যে পরম দয়ালু সর্বশক্তিমান
স্রষ্টা প্রতিটি বর্ণ , ধর্ম এবং রঙ এর প্রাণীর উপর
একটি মাতৃভাষা অর্পণ করেছেন।
এটি শিশু জন্মের পর প্রথম তার মায়ের কাছ
থেকে যে ভাষায় কথা বলতে শিখে সেটিই তার
মাতৃভাষা। এটি এত গুরুত্বপূর্ণ যে মানুষ
পরিষ্কারভাবে মাতৃভাষার মাধ্যমে তাদের
ধারণা, চিন্তা , অনুভূতি, আবেগ ইত্যাদি প্রকাশ
করে থাকে। কিন্তু তৎকালীন পাকিস্তানি শাসক
গোষ্ঠী আমাদের বাঙ্গালিদের কাছ থেকে এই
প্রিয় মাতৃভাষা বাংলা কেরে নিয়ে উর্দুকে
বানাতে চেয়েছিল মাতৃভাষা। কিন্তু আমাদের
দেশের বাঙলা মায়ের দামাল ছেলেরা তা হতে
দেয়নি। লাখো শহীদের বুকের তাজা রক্তের
বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের প্রিয়
মাতৃভাষা আমাদের বাঙলা ভাষা।
আমাদের আজকের এই বাংলাদেশ পূর্বে এক
সময় পাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৪৭
সালে ভারত বিভাজনের পর পূর্ব পাকিস্তান
এবং পশ্চিম পাকিস্তান নামে দুইটি অংশের সৃষ্টি
হয় যেখানে পূর্ব বাংলার মানুষের ভাষা
ছিল বাঙলা এবং পশ্চিম পাকিস্তানের
মানুষের
ভাষা ছিল উর্দু।
মার্চ ২১, ১৯৪৮, পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ রেসকোর্স ময়দানের
এক জনসভায় হঠাৎ করে ঘোষণা দেন যে উর্দু
হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।
পরবর্তীতে তিনি ২৪ মার্চ ১৯৪৮ ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল এর এক সভাতেও
একই
ঘোষণা দেন তিনি। তিনি ২৮ মার্চ ঢাকা
ত্যাগ করার পূর্বেও রেডিও তে একই ঘোষণা
দিয়ে যান। তিনি ঢাকা ত্যাগ এর পর ধীরে ধীরে
আন্দোলন শুরু হতে থাকে। সাধারণ মানুষ
তাদের দাবি দাওয়া সরকারের কাছে পেশ
করতে থাকে।
১৯৫২ সাল
১৯৫২ সাল, ৪ ফেব্রুয়ারি, ঢাকার নওাবপুর
রোডে অনুষ্ঠিত হয় এক রেলি।
এরপর পূর্ব বাংলার ছাত্র সমাজ জাতীও ভাষা
হিসেবে উর্দু ঘোষণা করার জন্য পাকিস্তান
সরকারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠে প্রতিবাদ জানায়।
সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তান নাগরিকদের মধ্যে প্রায়
৫৪% নাগরিক ই ছিল বাঙালি।
২১ ফেব্রুয়ারী ১৯৫২, ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনে ছাত্র
সমাবেশ।
সেদিন সকাল ৯ টার দিকে ছাত্ররা ১৪৪ ধারা
ভঙ্গ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে
একত্রিত হতে থাকে। এসময় সশস্ত্র পুলিশ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারদিক বেষ্টন করে
রাখলে ছাত্ররা তা ভঙ্গ করে রাস্তায় বের হতে
চাইলে পুলিশ সেখানে কাঁদানে গ্যাসের শেল
নিক্ষেপ করে।
পুলিশের গুলি বর্ষণের ফলে একদল ছাত্র দৌড়ে
ঢাকা মেডিকেল কলেজের ভিতর ঢুকে পড়ে।
১৪৪ ধারা ভঙ্গের কারনে পুলিশ কিছু ছাত্রকে
আটক করে নিয়ে যায়। গ্রেফতারের সংবাদ
পেয়ে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা পূর্ব বাংলা আইন
পরিষদের সামনে পথ অবরুদ্ধ করে। তাদের
মধ্যে
একদল ছাত্র ভবনের মধ্যে প্রবেশ করতে
চাইলে পুলিশ গুলি চালায়। এতে আব্দুস
সালাম , আব্দুল জব্বার , আবুল বরকত ,
রফিক উদ্দিন, শফিক সহ আরও অনেকে নিহত
হয়। রাজপথ
ভরে উঠে এসব শহীদের বুকের
তাজা রক্তে।
১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ এর জন্মের পর
থেকে ২১ শে ফেব্রুয়ারি প্রতি বছর জাতীয়
শোক দিবস হিসেবে পালন করা হতো।
অতঃপর ১৭ নভেম্বর ১৯৯৯, ইউনেস্কো বাঙলা
মায়ের ধামাল সন্তানদের এই অসামান্য
আত্মত্যাগের জন্য ২১ শে ফেব্রুয়ারী কে
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা
করেন
এখন প্রতিবছর ২১ শে ফেব্রুয়য়ারি
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত
হয়। এইদিন বাংলার মানুষ ভোরবেলা খালি
পায়ে শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শহীদের প্রতি
শম্মান প্রদর্শন করতে যান।
আর সকলের কণ্ঠে থাকে একটিমাত্র ধ্বনি
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দলনে বাংলা মায়ের যেসব ধামাল
সন্তান ভাষার জীবন দান করেছেন তারাই হল ভাষা শহীদ।
সালাম , আব্দুল জব্বার , আবুল বরকত, রফিক, শফিউর সহ
আরও অনেকে শহীদ হন।
১. আবুল বরকত : বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা
করার দাবিতে ১৯৫২-র ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল
কলেজের সম্মুখের রাস্তায় ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে বিক্ষোভ
প্রদর্শনরত ছাত্র-জনতার উপর পুলিশ গুলি চালালে হোস্টেলের
১২ নম্বর শেডের বারান্দায়
গুলিবিদ্ধ হন বরকত। ঢাকা
মেডিকেল কলেজের হাসপাতালে জরুরি বিভাগে ভর্তি
অবস্থায় রাত আটটার দিকে মৃত্যুবরণ করেন।২১ ফেব্রুয়ারি,
১৯৫২ সালের রাতে আবুল বরকতের আত্মীয়-স্বজনের
উপস্থিতিতে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে আজিমপুর
গোরস্তানে
তাঁর লাশ দাফন করা হয়।
২. রফিকউদ্দিন আহমদ : বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের
অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৯৫২-র ২১শে ফেব্রুয়ারি
ঢাকা মেডিকেল কলেজের সম্মুখের রাস্তায় ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে
বিক্ষোভ প্রদর্শনরত ছাত্র-জনতার মিছিলে রফিক অংশগ্রহণ
করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালের হোস্টেল
প্রাঙ্গনে পুলিশ গুলি চালালে সেই গুলি রফিকউদ্দিনের মাথায়
লাগে। গুলিতে মাথার খুলি উড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু
হয়। মেডিকেল হোস্টেলের ১৭ নম্বর রুমের পূর্বদিকে তার লাশ
পড়ে ছিল। ছয় সাত জন ধরাধরি করে তার লাশ
এনাটমি
হলের পেছনের বারান্দায় এনে রাখেন। তাদের মাঝে ডাঃ
মশাররফুর রহমান খান রফিকের গুলিতে ছিটকে পড়া মগজ
হাতে করে নিয়ে যান। রাত তিনটায় সামরিক বাহিনীর প্রহরায়
ঢাকার আজিমপুর গোরস্তানে শহীদ রফিকের লাশ দাফন করা
হয়।
৩. আবদুস সালাম : বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম
রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বায়ান্নোর ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা
মেডিকেল কলেজের সম্মুখের রাস্তায় ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে
বিক্ষোভে অংশ নেন। পরে ছাত্র-জনতার উপর পুলিশ
এলোপাথাড়িভাবে গুলি চালালে আবদুস
সালাম
গুলিবিদ্ধ হন। আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল
কলেজ হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়।
দেড় মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর ৭ এপ্রিল, ১৯৫২ তারিখে
তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনৈতিক অবস্থান ফিরে পাওয়ার পর
জামাতে ইসলামী ২১ ফেব্রুয়ারি বিশেষ দোয়া দিবস পালন
করে। কিন্তু আমরা কেউ হয়তো খতিয়ে দেখার প্রয়োজন মনে
করিনি তারা কেনো এটা করে, এখানে কি বিষয়ে দোয়া হয়।
ভাষা দিবস একটা উছিলা মাত্র, তবে তারা
এদিন সত্যিই শহীদ
দিবস পালন করে এবং শহীদদের জন্য দোয়া
মাহফিল আয়োজন করে। অত্যন্ত গোপন
সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে এদিন তারা আসলে কাদের
ভজনা করে। জানেন এই শহীদদের পরিচয়? ১৯৭২ সালের
২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা কারাগার থেকে পালানোর চেষ্টা করার
সময় একদল বন্দী পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। এরা
সবাই ছিলো ইসলামী ছাত্র সংঘের (বর্তমানে ইসলামী
ছাত্র শিবির) আল-বদর বাহিনীর সদস্য। সেই
নিহত ১৮ জন আল-বদরকে জামাত শহীদি মর্যাদায়
এদিন স্মরণ করে।