Formats
Blog image

শহীদ হয়েছিলেন যারা

adbertisements

রফিক উদ্দিন

রফিক উদ্দিন আহমদ (১৯২৬-১৯৫২) ভাষাশহীদ। ১৯২৬ সালের ৩০ অক্টোবর মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর উপজেলার পারিল গ্রামে তাঁর জন্ম। ১৯৪৯ সালে বায়রা স্কুল থেকে তিনি ম্যাট্রিক পাস করেন। মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্র কলেজে ইন্টারমিডিয়েট ক্লাসে অধ্যয়নকালে তিনি পড়াশুনা বন্ধ করে ঢাকায় চলে আসেন এবং পিতার মুদ্রণশিল্প ব্যবসায়ে নিয়োজিত হন। বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সারা ঢাকায় ধর্মঘট আহবান ও বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয়। সরকার ঐদিন ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে। সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণ করে। রফিক উদ্দিনও মিছিলে অংশ নেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হোস্টেল প্রাঙ্গণে মিছিলের ওপর পুলিশ গুলিবর্ষণ করে এবং ঘটনাস্থলেই রফিক উদ্দিন শহীদ হন। পুলিশ তাঁর লাশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যায় এবং রাত ৩টায় সামরিক বাহিনীর প্রহরায় ঢাকার আজিমপুর গোরস্তানে তাঁকে দাফন করা হয়। ভাষা আন্দোলন-এ আত্মদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করা হয়।

adbertisements

আবদুল জব্বার

ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁর উপজেলার পাঁচুয়া গ্রামে ১৩২৬ বঙ্গাব্দের ২৬ আশ্বিন আবদুল জব্বার জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতার নাম শেখ হাছেন আলী ও মাতা সাফাতুন্নেসা। জব্বার ছিলেন পিতামাতার প্রথম সন্তান। স্থানিয় ধোপাঘাট কৃষ্ট বাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন।পরিবারের দারিদ্রতার কারনে তাঁর লেখাপড়ার পরিসমাপ্তি ঘটে। পিতাকে কৃষি কাজে সহায়তা করার জন্য তাঁকে লাঙ্গল নিয়ে মাঠে যেতে হয়। তাঁর স্বভাবের মধ্যে হেঁয়ালি ভাব ছিল। পিতামাতার শাসেেনর ভয়ে মাঝেমাঝে তিনি বাড়ি ছেড়ে উধাও হয়ে যেতেন।একবার তিনি ঘর থেকে পালিয়ে ট্রেনে চড়ে নারায়নগঞ্জ চলে যান। নারায়নগঞ্জ জাহাজ ঘাটে এক জন ইংরেজের সাথে পরিচয় হয়। ঐ ইংরেজের সহায়তায় একটি কাজ নিয়ে তিনি বার্মা চলে যান। এজন্য তিনি দীর্ঘকাল বার্মায় আবস্থান করেন। ঐ সময় তিনি ইংরেজী ভাষা শিখেন। এক নাগারে দশ-বারো বছর বার্মায় কাটানোর পর একদিন তাঁর জন্মভূমির কথা ও মায়ের কথা মনে পড়ে। মায়ের স্নেহের প্রবল টানে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। নিখোঁজ পুত্রকে পেয়ে মা সাফাতুন্নেসা আনন্দে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। প্রিয় পুত্রকে তিনি বুকে টেনে নেন। ইতিমধ্যে আবদুল জব্বার এর পিতার মৃত্যু হয়েছিল। দেশে ফিরে তিনি ন্যাশনাল গার্ড বাহিনীতে যোগদান করেন। তিনি ছোট-খাটো ব্যবসা-বানিজ্য করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ১৯৪৯ সালে পাঁচুয়া গ্রামের আমেনা খাতুন এর সাথে সাফাতুন্নেসা পুত্রের বিবাহ দেন। তাদের একজন পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহন করেন। পুত্রের নাম রাখা হয় নূরুল ইসলাম বাদল। এর কিছু কাল পর শুরু হয় রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন। পাকিস্তানের প্রতি আবদুল জব্বার এর আস্থা ছিলনা। বন্ধু-বান্ধব, আত্মিয়-স্বজন, পরিচিতজন ও গ্রামবাসীদের সাথে আলোচনার সময় পাকিস্তানকে তিনি ফাহিস্তান বলে উপহাস করতেন। ১৯৫২ এর ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গনে হাজার-হাজর সংগ্রামী জনতার সমাবেশে আবদুল জব্বার যোগদান করেন। আন্দোলনকারীদের উপর পুলিশ গুলি চালায়। বুলেট বিদ্ধ হয়ে আবদুল জব্বার গুরুতর আহত হন। তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঐ দিন রাতে হাসপাতালে তিনি ইহকাল ত্যাগ করেন। তাঁকে আজিমপুর গোরস্থানে আফন করা হয়। আবদুল জব্বার ১৯৫২-র গৌরবময় ভাষা আন্দোলনের একজন অমর শহীদ। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের অন্যতম ভাষা হিসাবে বাংলা শাসনতান্ত্রিক স্বীকৃতি লাভ করে। বাংলাদেশ সরকার ২০০০ সালে তাঁকে মরনোত্তর একুশে পদক প্রদান করেন।

adbertisements

আবদুস সালাম

আবদুস সালাম (ভাষা শহীদ) - বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বায়ান্নোর ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সম্মুখের রাস্তায় ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে বিক্ষোভে অংশ নেন। পরে ছাত্র-জনতার উপর পুলিশ এলোপাথাড়িভাবে গুলি চালালে আবদুস সালাম গুলিবিদ্ধ হন। আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। দেড় মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর ৭ এপ্রিল, ১৯৫২ তারিখে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।[২]

adbertisements

আবুল বরকত

ভাষা শহীদ আবুল বরকত ১৬ই জুন ১৯২৭ সালে ভারতের পশ্চিম বঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি মহকুমার ভরতপুর থানার বাবলা নামক একটি ছোট গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতার নাম শামসুউদ্দিন। ১৯৪৫ সালে পার্শ্ববর্তী গ্রামের তালিবপুর ইংলিশ হাই স্কুল থেকে প্রবেশিকা পাশ করেন। ১৯৪৭ সালে বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। পরে ১৯৪৮ সালে তিনি পূর্ব বাংলায় চলে আসেন। ঢাকার পুরানা পল্টনে বিষ্ণু প্রিয়া ভবনে তার মামা আব্দুল মালেকের বাড়ীতে উঠেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এই বাড়িতেই ছিলেন। ঢাকায় এসে ১৯৪৮ সালেই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স কোর্সে ভর্তি হন। ছাত্র হিসাবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত মনোযোগী, নম্র, ভদ্র ও চরিত্রবান। ১৯৫১ সালে তিনি অনার্স পরীক্ষায় দ্বিতীয় শ্রেনীতে চতুর্থ স্থান লাভ করেন এবং এম.এ. শেষ পর্বে ভর্তি হন।১৯৫২ সাল ২১ ফেব্রুয়ারী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের সামনে আমতলায় সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মী পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত সমাবেশে যোগদান করেন। ঢাকাসহ সারাদেশে "রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই" এই দাবীতে তখন আন্দোলন তীব্র হয়ে উঠে। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ছাত্রজনতার শ্লোগানে শ্লোগানে কেঁপে উঠে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। পুলিশের সঙ্গে ছাত্র জনতার সংঘর্ষ শুরু হয় বিক্ষিপ্তভাবে। বাঙালি জনতার চোখে সেদিন ছিল ভয়ের পরিবর্তে ঘৃনার আগুন । পুলিশ চেষ্টা করছিল ছাত্রদের ব্যারিকেড ভেঙ্গে হোস্টেল চত্বরে ঢুকতে। কিন্তু, ছাত্রদের শক্ত প্রতিরোধের কারনে তারা ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছিল । বেলা ৩টার দিকে হোস্টেল চত্বরে ঢুকে নির্মমভাবে গুলি চালাতে থাকে পুলিশ। সেই সময় আবুল বরকত অন্য এক বন্ধুর দিকে এগিয়ে এসেছিলেন। হঠাৎ তিনি বুলেটের আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। প্রথমে কেউ বুঝে উঠতে পারেনি, ততক্ষনে রক্তধারা ছুটে মাটি ভিজে যাচ্ছে। তলপেটে গুলি লেগেছিল তার । পরনের নীল হাফ শার্ট, খাকি প্যান্ট ও কাবুলী স্যান্ডেল রক্তে ভিজে যাচ্ছে। দুই তিন জন ছুটে এসে সুঠামদেহী বরকতকে কাঁধে তুলে জরুরী বিভাগের দিকে দৌড়াতে থাকেন। বরকত তখন বলেছিলেন "আমার খুব কষ্ট হচ্ছে হয়ত আর আমি বাঁচবনা, পুরানা পল্টনে বিষ্ণু প্রিয়া ভবনে এ খবর পৌঁছে দিবেন। ডাক্তাররা তাকে বাঁচানো জন্য আপ্রান চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু অতিরিক্ত রক্তক্ষরনের জন্য সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারী রাত ৮টার সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরী ওয়ার্ডে মহান এই দেশ প্রেমিক শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।