নামায শিক্ষা
রাসুল (সঃ) হতে বর্ণিত যে,
"ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি জিনিসের
উপর স্থাপিত"
১/ কালেমা,
২/ নামায,
৩/ রোযা,
৪/ হজ্জ,
৫/ যাকাত
আল্লাহ তা'আলা বলেন, "আমি জ্বিন ও
মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছি যে তারা
একমাত্র আমার ইবাদাত করবে"(সূরা
আযযারিয়াত-৫৬)
আল্লাহ তা'আলা বলেন, "প্রত্যেক
উম্মাতের নিকট আমি রাসুল প্রেরণ
করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর
ইবাদাত কর এবং তাণ্ডব থেকে দূরে
থাক" (সূরা আন নাহল-৩৬)
তিনি আরও বলেন,"যে ব্যাক্তি
রাসুলের আনুগত্য করল সে ব্যাক্তি
আল্লাহর আনুগত্য করল" (সূরা আন
নিসা-৮০)
ইসলামে নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম।
নামায ইসলামের দ্বিতীয় রুকন যা
প্রতিষ্ঠিত করা ব্যাতিত মুসলমান
হওয়া যায় না।
হাদিসে আছে যে, "মুমিন ও
কুফর-শিরকের মধ্যে পার্থক্য হল
নামায ত্যাগ করা"।(মুসলিম)
মহানবী (সঃ) বলেন "আমাদের এবং
তাদের মধ্যকার অঙ্গীকার হল নামায
আর জারা ইহা ত্যাগ করবে
তারা কাফির হয়ে যাবে"
নামায ইসলামের স্তম্ভ এবং বড়
নিদর্শন এবং বান্দা ও টার
প্রতিপালকের মধ্যে সম্পর্ক
স্থাপনকারী।
মহানবি(সঃ) বলেন "নিশ্চই তোমাদের
মধ্যে কেউ যখন নামায আদায় করে
সে তখন তার প্রতিপালকের সাথে
নির্জনে কথা বলে" ।
আল্লাহ পাক বলেন "হে মুমিনগণ!
তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে
সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চই
আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন" (সুরা-আল বাকারা-১৫৩)
আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে
নামাজের ব্যাপারে খুবই গুরুত্ব
আরোপ করেছেন এবং নামায ও
নামাজিকে সম্মানিত করেছেন এবং
তিনি বলেছেন "তুমি নামাজ
সুপ্রতিষ্ঠিত কর নিশ্চই নামায
অশালীন ও খারাপ কাজ থেকে বিরত
রাখে" (সূরা-আল আনকাবুত-৪৫)
ইসলাম মুসলমানদের উপর দিনে
রাতে ৫ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছে।
ফজর, যোহর, আসর, মাগরিব, এশা।
১. ফরজের নামাযঃ এর ফরয দুই
রাকাত। এর সময় রাতের শেষাংশে,
পূর্বাকাশে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত।
২. যোহরের নামাযঃ এর ফরয চার
রাকাত। এর সময় মধ্য আকাশ থেকে
সূর্য ঢলে যাওয়ার পর মূল ছায়া
ব্যাতিত প্রত্যেক জিনিসের ছায়া তার
সমান হওয়া পর্যন্ত।
৩. আসরের নামাযঃ আসরের নামায
চার রাকাত।এর সময় যোহরের সময়
শেষ হওয়ার পর থেকে আরম্ভ হয়।
এর সবচেয়ে উত্তম সময় জাওয়ালের
ছায়া ছারা প্রত্যেক জিনিসের ছায়া
দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত। আর জরুরি
ওয়াক্ত সূর্য নিস্তেজ হয়ে রোদের
রং হলুদ হওয়া পর্যন্ত।
৪.মাগরিব নামাযঃ মাগরিব নামাজ
তিন রাকাত। এর সময় সূর্যাস্তের
পর থেকে পশ্চিম আকাশে লোহিত
রং অদৃশ্য হওয়ার আগ পর্যন্ত।
৫. এশার নামাযঃ এশার নামায চার
রাকাত। এর সময় মাগরিবের
সময় শেষ হওয়ার পর থেকে
রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত।
নামায শিক্ষা
নিয়ম
রাসূল (সাঃ) দৃঢ়তার সাথে জোড়ালো
ভাষায় বললেন,
“তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত
আদায় করতে দেখ, ঠিক
সেভাবেই সালাত আদায় কর।”
[মেশকাত, ২য় খন্ড, হাদীস ৬৩২]
সালাতের নিয়মঃ
১) সালাতের জন্য পুরুষ আযান
দিবে কিন্তু মহিলা আযান
দেবে না।
২) সালাতে মহিলা মাথা ঢেকে
রাখবে, কিন্তু পুরুষের মাথা
না ঢাকলেও সালাত হয়ে যাবে।
৩) মহিলাদের পায়ের গোড়ালী ঢেকে
রাখতে হবে তা নাহলে সালাত সিদ্ধ
হবে না। অপরদিকে পুরুষদের পায়ের
গোড়ালী খোলা রাখতে হবে।
৪) কোন মহিলা পুরুষদের ইমামতি
করতে পারবে না, কিন্তু
পুরুষরা নারী পুরুষ উভয়েরই
ইমামতি করতে পারবে। মহিলা
অবশ্য শুধু মহিলাদের
জামায়াতে ইমামতি করতে পারবে।
৫) জামায়াতে সর্বাবস্থায় মহিলাদের
কাতার পুরুষদের কাতারের
পিছনে থাকবে।
নিয়ম
৬) পুরুষ ইমামতি করলে কাতারের
আগে একাকী দাড়াঁতে হবে,
যদি ওজর না থাকে। কিন্তু
মহিলা ইমাম হলে তাকে
মহিলাদের কাতারের মাঝখানে
দাঁড়াতে হবে। [বর্ণিত
আছে যে, আয়েশা (রাঃ)
এবং উম্মে সালমা (রাঃ)
যখন মেয়েদের ফরয
সালাত অথবা তারাবীহ এর
সালাতে জামায়াতে ইমামতি
করতেন তখন তাদের
মাঝখানে দাঁড়াতেন।
৭) যদি ইমাম ভুল করে তাহলে
মহিলাদেরকে হাত তালি দিয়ে বা
উরুর উপর হাত মেরে সংকেত দিতে
হবে। আর পুরুষদেরকে উচ্চঃস্বরে
সুবহানাল্লাহ বলতে হবে।
৮) তাকবীরে তাহরীমার সময়
পুরুষদের চাদর বা কম্বল ইত্যাদি হতে
হাত বের করে কাঁধ বা কান
পর্যন্ত উঠাতে হবে, অবশ্য ওজর
না থাকলে। কিন্তু মহিলাদের
চাদরের বা ওড়নার ভিতরে হাত
রেখেই কাঁধ বা কান পর্যন্ত
হাত উঠাতে হেব; তাকবীরের
সময়ও এভাবে করতে হবে।
৯) মসজিদ হতে মহিলারা সালাত
শেষ হলেই বের হয়ে যাবে,
আর পুরুষরা পরে বের হবে।
সালাতুত তাসবীহ নফল নামাজ। এটা
চার রাকাত বিশিষ্ট্য নামাজ। প্রতি
রাকাতে সুরা ফাতিহার সাথে সুরা
মিলিয়ে "সুবহানাল্লাহি ওয়াল
হামদুলিল্লাহি ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু
আল্লাহু আকবার" ১৫ বার, রুকুতে ১০
বার, রুকু থেকে মাথা
উঠিয়ে ১০ বার, সিজদায় ১০
বার, সিজদা থেকে মাথা
উঠিয়ে ১০ বার, আবার সিজদায়
গিয়ে ১০ বার, এরপর সিজদাহ
থেকে উঠে ১০ বার। এভাবে
হল একরাকাতে ৭৫ বার। এভাবে
প্রতি রাকাতেই পড়তে হবে। (আবু
দাউদ, ইবনে মাজাহ, হাদিসটি সহীহ)
জায়নামাজের দোয়াঃ ইন্নি
ওয়াজজাহতু ওয়াজিহিয়া লিল্লাজি
ফাতারাস সামাওাতি ওয়াল আরদা
হানিফাও ওয়ামা আনা মিনাল
মুশ্রেকিন।
সানাঃ সুব্হানাকা আল্লাহুমা
ওয়াবিহামদিকা ওয়াতাবারা কাসমুকা
ওয়াতা’লা জাদ্দুকা ওয়ালা
ইলাহা গাইরুক।
দুই সিজদার মাঝে পড়ার
দোয়াঃ “সুবহানাকা আল্লাহুম্মা
রব্বানা ওয়াবিহামদিকাল্লাহুম
মাগফিরলি" ; “আল্লাহুম্মা ইন্নী
আ’উযু বিরিদাকা মিন সাখাতিকা,
ওয়া বিমু’আ-ফাতিকা মিন
‘উক্কুবাতিকা ওয়া ‘আউযু
বিকামিনকা, লা-উহসী সানা-আন
‘আলাইকা আনতা কামা আসনাইতা
‘আলা নাফসিকা”
তাশাহুদঃ আত্ত্যাহ্যিয়াতু লিল্লাহি
ওয়াস সালাওয়াতু ওয়াত্তায়্যিবাতু
(কি মৌখিক,কি দৈহিক,কি
আর্থিক সকল ইবাদাত এক
মাত্র আল্লাহ’র জন্য/সমস্ত
সম্মানজনক সম্বোধন আল্লাহর
জন্যে।সমস্ত শান্তি কল্যাণ
ও পবিত্রার মালিক আল্লাহ)
আসসালামু আলাইয়কা
আইয়্যহান্নাবিও ওয়া
রাহমাতুল্লাহি ওবারাকাতুহু
(হে নবী, আপনার উপর
আল্লাহ’র শান্তি, রহমত
ও বরকত বর্ষিত হোক)
আসসালামু আলায়না ওয়া আলা
ইবাদিল্লাহিস সোয়ালেহিন(আমাদের
উপর এবং সৎকর্মশীল
বান্দাদের উপর আল্লাহ’র
শান্তি বর্ষিত হোক) আশহাদু
আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু
ওয়া আশহাদু আন্না
মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়া
রাসুলুহু (আমি সাক্ষ্য
দিচ্ছি আল্লাহ ব্যতিত অন্য
কোন ইলাহ নেই,আরো সাক্ষ্য
দিচ্ছি মুহাম্মাদ(সাঃ) আল্লাহ’র
বান্দা ও রাসুল)
দুরুদ শরিফঃ আল্লাহুম্মা
ছাল্লি আলা মুহাম্মাদিও
ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন্
কামা ছাল্লাইতা আলাইব্রাহীমা
ওয়া আলা আলি ইব্রাহীমা
, ইন্নাকা হামিদুম্মাজিদ।
আল্লাহুম্মা বারিক আলা
মুহাম্মাদিও ওয়া আলা
আলি মুহাম্মাদিন কামা
বারাকতা আলা ইব্রাহীমা
ওয়া আলা আলি ইব্রাহীমা
ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ।
দোয়া মাসুরা উচ্চারণঃ
আল্লাহুম্মা ইন্নী যালামতু
নাফসী যুল্মান কাসীরাওঁ
ওয়ালা ইয়াগ ফিরুয যুনূবা
ইল্লা আন্তা; ফাগফির লী
মাগফিরাতাম মিন ইন্দিকা
ওয়ার হামনী ইন্নাকা
আন্তাল গফুরুর রাহীম।
অর্থঃ হে আল্লাহ্!
আমি আমার নিজ আত্মার
উপর বড়ই অত্যাচার
করেছি, গুনাহ মাফকারী
একমাত্র তুমিই; অতএব
তুমি আপনা হইতে
আমাকে সম্পূর্ণ ক্ষমা কর
এবং আমার প্রতি দয়া
কর। তুমি নিশ্চয়ই
ক্ষমাশীল দয়ালু।